,

সাভারে নদী দখল করে বালুর ব্যবসা জনদূর্ভোগ চরমে

সিমা জাহান সাথী”

(এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪.কম) :
সাভারের নয়ারহাট এলাকায় বংশী নদী দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অর্ধশত অবৈধ বালুর গদিঘর। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় বালু বোঝাই বাল্কহেডে করে বালু এনে নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা গদিঘরে আনলোড করা হচ্ছে। তারপর এসব বালু ড্রাম ট্রাকে করে উন্মুক্তভাবে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করায় একদিকে যেমন জনগনের ভোগান্তি বেড়েছে অন্যদিকে নদী দখলসহ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সড়কগুলো অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের মদদে এসব কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে আসলেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে নয়ারহাট ও আশপাশের এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নয়ারহাট ব্রীজের নীচেই রাস্তার উন্নয়ন কাজের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ একটি জায়গা ঘেরাও করে রেখেছে। এর দক্ষিন পাশেই নদীর প্রায় অর্ধেক দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেনের মালিকানাধীন তালুকদার এন্টারপ্রাইজ নামক একটি বালুর গদি। বড় বাল্কহেডে করে বালু এসে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে সেখানে আনলোড করার পাশাপাশি সেখান থেকে শত শত ড্রাম ট্রাকে করে বালুগুলো বিক্রী করা হচ্ছে।
এর পাশেই নয়ারহাট থেকে সাভার নামাবাজার পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলছে বেশকিছুদিন ধরেই। গত দুই দিন আগে ওই সড়কটি পিচ ঢালাই করা হলেও সেই ঢালাইলের উপর বৃষ্টির মধ্যে কাদাপানি লাগিয়ে ড্রাম ট্রাকে করে বালু নেয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে বাজারের ভিতর দিয়ে চলাচলের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে অসুবিধা হতো। কয়েক বছর আগে নদী ভরাট করে তৈরী করা রাস্তাটি সরকারিকাভাবে পিচ ঢালাই করা হচ্ছে। কিন্তু ঢালাই না শুকানোর আগেই বৃষ্টির মধ্যে কাঁদামাটিসহ বালুর ট্রাক চলায় রাস্তাটি নষ্ট হওয়র আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুখনার সময়ও বালু উড়ে চোখেমুখে ও শরীরে এসে পড়ে। নদী ভরাট করে বালুর ব্যবসা করায় একদিকে নদী মরে যাচ্ছে অন্যদিকে বালুর কারনে রাস্তা দিয়ে চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে এসব বালুর গদি উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন তারা।
তালুকদার এন্টারপ্রাইজের পরিচালক রাসেল তালুকদার জানান, বালুর গদিটি মোয়াজ্জেম নেতার, আমি ভাড়ায় চালাই। তবে নদী দখল করে বালুর গদি স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন জানান আমার কোন বালুর গদি নাই ওইটা পারভেজ চেয়ারম্যানের গদি।
এরপর কিছুদুর এগোলেই মসজিদের পাশেই দেখা মিলে আরও দুটি বালুর ড্রেজারের। এর মধ্যে একটি পরিচালনা করছেন মোয়াজ্জেম অপরটি বাছেদ দেওয়ান। বালুর কারনে মসজিদের মুসুল্লীরাও ঠিকমতো নামাজ আদায় করতে পারেনা। রাস্তার উপর দিয়ে ড্রেজারের পাইপ নেয়ায় বালুর পাশাপাশি চলচলের রাস্তায়ও দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের।
জানতে চাইলে পাথালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ পারভেজ দেওয়ান বলেন, আমার কোন বালুর গদি নাই। এলাকাবাসীদের দুর্ভোগসহ রাস্তার ক্ষতি হওয়ায় আমি সবসময় এসবের বিপক্ষে। আপনারা একটু লেখালেখি করে প্রশাসনকে দিয়ে বালুর গদিগুলো উচ্ছেদের ব্যাবস্থা করেন।
অন্যদিকে নয়ারহাট ব্রীজের উত্তর দিকেও বংশী নদী দখল করে গড়ে উঠেছে অন্তত ত্রিশটি বালুর গদি। এর আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে বালুর গদিগুলো সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হলেও তার কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মাজহারুল ইসলাম বলেন, নদী দখল করে বালুর গদি এবং দোকানঘর নির্মানের খবর শুনে আমি সম্প্রতি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কারা নদী দখল করেছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে।


More News Of This Category